গরিব দুঃখী অসহায় মহিলাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভকালীন ভাতা ব্যবস্থা করেছেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পুষ্টি সমৃদ্ধ আগামী প্রজন্ম তৈরি লক্ষে এই কর্মসূচিটি চালু করা হয়েছে। মাতৃগর্ভ থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টির চাহিদা মনো-সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে এই ভাতা প্রদান কর্মসূচি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।
কর্মসূচিটি মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, শীর্ণকায় ও খর্বাকার শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য এবং শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত মানবসম্পদ তৈরিতে অবদানের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে । ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছর থেকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচি শুরু করা হয়।
মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম এবং কি কি লাগবে, কে কে এই ভাতার আওতাধীন, আবেদন এর নিয়ম ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক –
মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতা কতো টাকা
অনেক এর মনে প্রশ্ন থাকে যে গর্ভকালীন ভাতা কতো টাকা দেওয়া হয়। আপনার আবেদনটি যদি সটিক ভাবে সম্পূর্ণ হয় তাহলে কয়েকটি ধাপ এ মোবাইল ব্যাংকিং বা আবেদনকারীর ব্যাংক একাউন্টের এর মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতা পৌঁছে দিবে সরকার।
চূরান্ত নির্বাচন এর পর আপনি গর্ভবতী ভাতা বা মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য নির্বাচিত হলে প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর ৪৮০০ টাকা দেওয়া হবে (ব্যাংকিং/মোবাইল ব্যাংকিং) এর মাধ্যমে। এইভাবে আপনাকে দুই বছর অর্থাৎ ২৪ মাস পর্যন্ত ভাতা প্রদান করা হবে। এবং সর্বমোট ১৯,২০০ টাকা একজন গর্ভবতী মা ভোগ করতে পারবেন।
আর যদি তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে হয়, তাহলে তিন বছর অর্থাৎ ৩৬ মাসে ৬ বার ৪৮০০ টাকা করে মোট ২৮,৮০০ টাকা সেবা দেওয়া হবে নির্বাচিত ব্যক্তিকে।
আশা করি মাতৃত্বকালীন ভাতা কতো টাকা এবং এই টাকা আপনি কিভাবে পাবেন তার সম্পর্কে আপনি একটি ধারনা পেয়েছেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে কি কি লাগবে:
চলুন তাহলে জেনে নেই মাতৃত্ব বা গর্ভকালীন ভাতার জন্য আপনার কি কি ডকুমেন্টস লাগবে। যাতে করে আপনি আবেদন এর আগে সব ডকুমেন্টস এক সাথে করে রাখতে পারেন। যা যা আবেদন এর জন্য দরকার তা নিছে দেওয়া হলো-
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তৃক গর্ভকালীন সনদ।
- ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন।
- টিকা কার্ড (প্রত্রয়ন)
- টাকা গ্রহণের জন্য ১১ ডিজিটের (বিকাশ/নগদ) মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার।
উপরে উল্লেখিত কাগজ বা ডকুমেন্টস গুলো গর্ভবতী ভাতার আবেদন এর জন্য আপনার প্রয়োজন। এগুলো সাথে নিয়ে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
গর্ভবতী ভাতা মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করবেন কোথায়?
গর্ভবতী ভাতা বা মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন সাধারনত তিন ভাবে করা যায় নিছে আবেদন এর নিয়ম দেওয়া হলো:
- ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল পোটালে মাধ্যমে।
- তথ্য আপার মাধ্যমে সরাসরি আবেদন।
- অনলাইনে আবেদন।
উপররের উল্লেখিত আবেদন এর নিয়ম গুলোর মধ্যে আপনার জন্য যে ভাবে সহজ হবে টিক সেই ভাবে আপনি গর্ভবতী বা মাতৃত্বকালীন ভাতা জন্য আবেদন করতে পারেন।
গর্ভবতী ভাতা আবেদন এর নিয়ম ২০২৪
মাতৃকালীন ভাতা বা গর্ভবতীকালীন ভাতা একই। আপনি যদি পরিপূর্ণ শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে পারেন তাহলে এই ভাতা আপনি পেতে পারেন। এর জন্য আপনার বিশেষ কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে যেমন: ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, গর্ভকালীন সনদ সহ টিকা কার্ড , সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হবে।
প্রতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে বা সিটি কর্পোরেশন এই ভাতার জন্য আবেদন করা যায়।
গর্ভবতীভাতা পাওয়ার শর্ত কি কি?
এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য যে শর্তগুলো মানতে হবে তা নিয়ে। নিছে সেই শর্ত গুলো দেওয়া হলো :
- প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল (এক বার)
- বয়স কম পক্ষে ২০ বা এর ঊর্ধ্বে ।
- মোট মাসিক আয় ১৫০০ টাকার নিম্মে।
- উপকারভোগীে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে।
- দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পাবেন।
- নিজের বা পরিবারে কোন কৃষি জমি বা মৎস, চাষের জন্য পুকুর নেই।
- কেবল বসত বাড়ি রয়েছে বা অন্য জায়গায় বাস করে।
আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আপনারা জানতে পারছেন যে কি কি শর্ত মানতে হবে আপনাকে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য।
গর্ভবতীভাতার জন্য আবেদন করতে কত টাকা লাগে?
নিচে গর্ভকালীন ভাতা বা মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনের জন্য কোন টাকা লাগে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- ইউনিয়ন পরিষধের ডিজিটাল পোটাল এর মাধ্যমে আবেদন করতে ৪০ টাকা আবেদন ফি লাগবে৷ তবে যে আপনাকে আবেদন করে দিবেন তিনি হয়তো ১০০/২০০ টাকা আপনার কাছ থেকে চেয়ে নিতে পারেন।
- আনলাইলে আবেদন করতে কোনো টাকার প্রয়োজন হয়না। যদি আপনি নিজে করেন তাহলে। আর অন্যের মাধ্যমে করালে উনাকে ১০০-২০০ টাকা দিতে হতে পারে।
- তথ্য আপার মাধ্যমে সরাসরি ভাবে করলে কোনো টাকার প্রয়োজন হয়না কারন এটা সরকারি ভাবে সম্পূর্ণ ফি। আপনার ইচ্ছে হলে উনাকে কিছু টাকা দিতে পারেন বা উনি চেয়ে নিতে পারেন।
আশা করি আবেদন করতে কত টাকার প্রয়োজন তা সম্পর্কে একটি ধারনা হয়েছে আপনাদের।
মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন ভাতা ইউনিয়ন পরিষদে আবেদনের নিয়ম
ইউনিয়ন পরিষদের মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে সরকারিভাবে নির্ধারিত আবেদন ফি হচ্ছে ৪০ টাকা। আপনি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল পোর্টালে গিয়ে আপনার তথ্য গুলো দিবেন। যেমন-
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- গর্ভবতী টিকার কাড ( হলুদ যে কাডটি থাকে)
- গর্ভবতী প্রমাণস্বরূপ যে কোন কাগজ ( হসপিটাল বা ডাক্তার স্লিপ?)
- মোবাইল ব্যাংকি(বিকাশ, নগত, রকেট) বা ব্যাংক একাউন্ট।
এই তথ্য গুলো নিয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আপনাকে আবেদন করে দিবেন আপনার আর কিছু করতে হবে না। আশা করি কিভাবে আবেদন করবেন সেই সম্পর্কে একটা আইডিয়া পেয়েছেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইনে আবেদনের নিয়ম
যে কোন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে আপনি উনাদের বলবেন যে আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে চান এবং আপনার তথ্য গুলো উনাকে দিলে উনি আপনাকে আবেদন করে দিবে। উপরে ইউনিয়ন পরিষদের যে কাগজ গুলো দিতে হয়ে ছিল সেই কাগজ বা ডকুমেন্টস উনাকে দিবেন।
আর আপনি যদি নিজে করেন তাহলে প্রথমে http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।

এবং আপনার নাম ঠিকানা বর্তমান ঠিকানা,স্থায়ী ঠিকানা, আর্থ – সামাজিক তথ্য ও পেমেন্ট তথ্য দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে হবে। আশা করি আপনি আবেদন এর ধাপ গুলো বুঝতে পারছেন।
কতো বার গর্ভকালীন ভাতার জন্য আবেদন করা যায়?
একজন ভাতাভোগী জীবনে একবার ২ (দুই) বছর সময়কালের জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা পাবেন। কোনো কারণে সন্তানের মৃত্যু হলে অথবা গর্ভপাতের কারণে নির্দিষ্ট চক্র অসম্পূর্ণ থাকলে তিনি পুনরায় গর্ভবতী হলে পরবর্তীতে ২ (দুই) বছরের মাতৃত্ব ভাতা প্রাপ্য হবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভের সন্তান গর্ভাবস্থায় বা জন্মের ২ (দুই) বছরের মধ্যে মারা গেলে তৃতীয় গর্ভধারণকালে ভাতা প্রাপ্য হবেন। যদি অন্যান্য শর্ত পূরণ হয়ে থাকে।
শেষ কথা
আশা করি আপনারা যারা অসহায় দরিদ্র গর্ভবতী মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন। এবং গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার কত টাকা ভাতা প্রদান করে সেই সম্পর্কে জানার আগ্রহ আছে । আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা দেয়? এবং কি কি কাগজ প্রয়োজন? কিভাবে আপনি আবেদন করবেন?
আশা করি সে সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার আশেপাশের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের কে দেখার ও মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন ধন্যবাদ।
আপনাদের মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভকালীন ভাতা সম্পকে বুঝতে অসুবিধা হলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।