এমএনপি কি (MNP) | কিভাবে নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তন করবেন

এমএনপি কি, কিভাবে করবেন, নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তন করার নিয়ম কি, ফি কত টাকা, এমএনপির সুবিধা অসুবিধা কি? এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন । অনেক গ্রাহক তাদের অপারেটর নিয়ে বিরক্ত, অনেকে মনে করে সিম অপারেটর বা কোম্পানি পরিবর্তন করলে নাম্বার পরিবর্তন হয়ে যাবে। আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো এমএনপি নিয়ে বিস্তারিত।

MNP এমএনপি কি?

মোবাইল নাম্বার একই রেখে সার্ভিস প্রোভাইডার পরিবর্তন করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় MNP বা Mobile Number Portability । আপনাকে অপারেটর পাল্টানোর জন্য আপনার পুরোনো নাম্বার পাল্টাতে হবেনা। নাম্বার টিক রেখে খুব সহজে এখন অপারেটর বদলাতে পারবেন। আপনি যে অপারেটরের সিম ক্রয় করবেন তাদের সেবা যদি আপনার ভালো না লাগে তবে আপনি চাইলেই তিন মাস পর আপনার  পছন্দের অন্য কোন অপারেটরে চলে আসতে পারবেন। আর এটাকেই মূলত বলা হয় মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি।

এমএনপির সুবিধা কি?

অনেক গ্রাহক একই অপারেটরের সিম দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না পেয়ে বিরক্ত হয়ে যান। অনেক সময় ঐ অপারেটর তাদের সার্ভিস চার্জ বাড়ায় বা নেটওয়ার্ক কভারেজ ঠিকমত দিতে পারেনা তখন অনেক গ্রাহক রাগ করে বা কৌতূহল বশেও এক অপারেটর থেকে আরেক অপারেটরে যেতে ইচ্ছা পোষণ করেন।

এমএনপি করার সুবিধা হল নাম্বার এখই রেখে অপারেটর পরিবর্তন করা। এবং যে অপারেটরে শিফট করবেন সেই অপারেটর সকল সার্ভিস গ্রহন করা।

এমএনপির অসুবিধা কি?

উপরে জানলেন এমএনপি করার সুবিধা এবার জানবেন এর অসুবিধা কি। অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে যেমন চার্জ দিতে হবে তেমনি কিছু আর্থিক শর্তও মানতে হবে। একবার এমএনপি করে অপারেটর পরিবর্তন করলে আবার এমএনপি করে অন্য কন অপারেটরে শিফট করতে হলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে তিন মাস বা ৯০ দিন। তবে অপারেটর বদল হলেও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নতুন অপারেটরে এক্টিভ হতে সর্বচ্চ ৭২ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।

MNP নিয়ে অনেকের অনেক সমস্যার কথা শুনেছি যদিও সমস্যাগুলো পরীক্ষিত নয়। যেমন ফেসবুক, Google বা বিভিন্ন যায়গা থেকে অটিপি ন আসা।

নাম্বার ঠিক রেখে MNP করে কিভাবে অপারেটর পরিবর্তন করবেন?

উপরের লেখা থেকে আপনারা জানলেন এমএনপি কি? এখন এই অণুচ্ছেদে আমি আপনাদের জানাবো যে কীভাবে MNP সার্ভিস ব্যবহার করে আপনাদের মোবাইল নাম্বর অন্য কোম্পানির সাথে জুড়তে পারবেন বা MNP করতে পারবেন। তাহলে এবার জেনে নেই মোবাইল নাম্বার এমএনপি করার পদ্ধতি। 

এমএনপি করে গ্রামীণফোনে কিভাবে আসবেন?

GrameenPhone বা জিপি নেটওয়ার্কে আসার জন্য আপনাকে আপনার আশে পাশের যেকোনো জিপি কাস্টমার কেয়ার এ যান। customer care  এ যাওয়ার পর আপনার NID কার্ড এর সকল তথ্য তাদের কে দিন। এবার তারা আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট চাইবে আপনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর কাজ সম্পূর্ণ করুন। বর্তমানে এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটর যাবার পর MNP অনুমোদন এর জন্য SMS পাবেন। SMS পাবার পর আপনার সিম অপারেটর বদল হবে এবং আগের অপারেটর এর সিম বন্ধ হবে। এবার আপনি জিপি সিম এর সকল সুবিধাগুলো গ্রহন করতে পারবেন।

এমএনপি করে রবিতে কিভাবে আসবেন?

Robi রবি অপারেটরে আসার জন্য আপনার নিকটতম রবি কাস্টমার কেয়ারে যান। যাবার পর আপনার NID কার্ড দিন এবং যে নাম্বার পরিবর্তন করবেন সে নাম্বার তাদেরকে বলুন। অপারেটর পরিবর্তন করার জন্য বায়োমেট্রিক্স রেজিস্ট্রেশন করুন। এবার নিয়ে নিন রবির নতুন সিম। এসএমএস আসার পর রবির নতুন সিম ব্যবহার করতে পারবেন। 

এমএনপি করে এয়ারটেলে কিভাবে আসবেন?

অন্য কোনো অপারেটর থেকে এয়ারটেল অপারেটর আসার জন্য আপনাকে কাছাকাছি থাকা এয়ারটেল সেবা কেন্দ্রে যেতে হবে। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র আর আপনার যে নাম্বারটি পরিবর্তন করবেন সেই নাম্বারটি দিন। এবার আপনার সিমটি বায়োমেট্রিক্স করুন। এখন আপনি আপনার নতুন সিমটি  নিতে পারেন। এবং এসএমএস পাওয়ার পর আপনার নতুন সিমটি ব্যবহার করতে পারবেন। 

এমএনপি করে বাংলালিংক কিভাবে আসবেন?

আপনি যে কোনো অপারেটর থেকে বাংলালিংক (Banglalink) অপারেটর এ আসার জন্য আপনার নিকটতম বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার এ যান। গিয়ে আপনার যে নাম্বার টি এমএনপি করতে চান সেটি তাদেরকে দিন। তারপর বায়োমেট্রিক্স প্রসেস সম্পূর্ণ করুন। বায়োমেট্রিক্স প্রসেস সম্পূর্ণ হলে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের মধ্যে অন্য অপারেটর থেকে বাংলালিংক এ আসতে পারবেন। যদিও সেটি সক্রিয় হতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

এমএনপি করে টেলিটক কিভাবে আসবেন?

আপনি যে কোনো অপারেটর থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রয়াত্ত অপারেটর টেলিটকে (Teletalk) এ আসার জন্য আপনার নিকটতম Teletalk কাস্টমার কেয়ার এ যান। গিয়ে আপনার যে নাম্বার টি এমএনপি করতে চান সেটি তাদেরকে দিন। তারপর বায়োমেট্রিক্স প্রসেস সম্পূর্ণ করুন। বায়োমেট্রিক্স প্রসেস সম্পূর্ণ হলে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের মধ্যে অন্য অপারেটর থেকে টেলিটকে আসতে পারবেন। যদিও সেটি সক্রিয় হতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

আরও পড়ুনঃ বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪ | ঘরে বসে কিভাবে খুলবেন (বোনাস সহ)

MNP এমএনপি করতে খরচ কত?

বিটিআরসি ও এমএনপি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া হিসেব অনুযায়ী  একজন গ্রাহককে অপারেটর বদলের জন্য সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হতে পারে। তবে তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ‘সিম পরিবর্তন করের’ বিষয়টিও রয়েছে যার পরিমাণ বর্তমানে সিম প্রতি একশ টাকা নেওয়া হয়। নিচে একটি ছকের মাধ্যমে এমএনপি করতে কোন অপারেটর কত টাকা নেয় সেটি দেওয়া হল:-

অপারেটরের নামফি
গ্রামিনফোন৩০৭.৫০ টাকা
রবি৩০৫ টাকা
এয়ারটেল৩০৫ টাকা
বাংলালিংক৩০০ টাকা
টেলিটক৩০০ টাকা
MNP Charge

উপরের উল্লেখিত ফি বা MNP Charge যেকোন সময় পরিবর্তন হতে পারে। অনেক সময় অনেক অপারেটর বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকতে পারে তাই অপারেটর পরিবর্তন করার সময় তাদের অফার বা ফি কত জেনে নিবেন।

শেষকথাঃ

আশাকরি আজকের আর্টিকেলে আপনাদের বোঝাতে পেরেছি এমএনপি কি কিভাবে নাম্বার ঠিক রেখে সিম অপারেটর পরিবর্তন করবেন। এবং MNP এর সুবিধা অসুবিধা গুলো বোঝাতে পেরেছি। যদি আপনার আর কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা চেস্টা করবো দ্রুত সময়ের ভিতরে আপনাদের কমেন্টের উত্তর দেওয়ার।

Leave a Comment