আপনারা যারা গ্রামীণ ব্যাংক লোন নিতে চাচ্ছেন বা গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আজকের আর্টিকেল এ আমরা আলোচনা করবো গ্রামীন ব্যাংক কি? গ্রামীণব্যাংক থেকে কিভাবে লোন নিবেন, লোন নিতে আপনার কি কি প্রয়োজন, কিভাবে আপনি আবেদন করবেন লোন এর জন্য। গ্রামীণব্যাংক কিভাবে লোন দেয় বা লোনপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো আজকের এই লেখা থেকে তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেই গ্রামীণ ব্যাংক কি?
গ্রামীণ ব্যাংক কি?
![গ্রামীণ ব্যাংক লোন | কত টাকা দেয়, কিভাবে পাবেন, কিস্তি কত টাকা image 43](https://infobaaz.com/wp-content/uploads/2024/01/image-43.png)
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং সামাজিক উন্নয়ন মূলক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। গ্রামীনব্যাংক বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ব্যাংক গুলোর মধ্যে একটি যা ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য, গ্রামীণ ব্যাংকের বদৌলতে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
গ্রামীনব্যাংক কি এনজিও
গ্রামীণব্যাংক এনজিও নয় এখন গ্রামীণ ব্যাংকের ঋনগ্রহীতারা ব্যাংক এর ৭৬% এর মালিক বাকি ২৪% সরকারের মালিকানাধীন ( ব্যাংক ওয়েবসাইট অনুসারে) গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ অনুসারে ৭৫%/২৫%। গ্রামীন ব্যাংক ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বৈধ ও স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ ব্যাংক এমন একটি স্বায়ওশাসিত ব্যাংক যার মূল লক্ষ গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের সেবা প্রধান করা এবং যার মালিক মূলত দেশের গরীব মানুষ যদিও এর সামান্য কিছু অংশের শেয়ার সরকারের রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের লোনের বা ঋণের প্রকারভেদ
লোন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেই গ্রামীণ ব্যাংক কতো ধরনের লোন দেয়।
গ্রামীনব্যাংক বিভিন্ন ধরনের লোন দিয়ে থাকে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভূমিহীন দরিদ্র জনগণকে আয় সৃষ্টিকারী ও তাদের জীবিকানির্ভর নানাবিধ কাজের জন্য নগদ অর্থ অথবা উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে জামানতবিহীন ঋণদান করাই গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কাজ।
গ্রামীণ ব্যাংকের লোনের প্রকারভেদ গুলোর মধ্যে অন্যতম ৬ টি হলো –
- ক্ষুদ্র ঋণ।
- কৃষি ঋণ।
- হাউজিং ঋণ।
- শিক্ষা ঋণ।
- উদ্যোক্তা ঋণ।
- পশুসম্পদ ঋন।
উপরের উল্লেখিত ঋণ গুলো গ্রামীন ব্যাংক দিয়ে থাকে। আপনারা গ্রামীণ ব্যাংকের শর্ত মেনে এই সকল খাতে খুব সহজে লোন বা ঋন নিতে পারবেন।
ঋন বা লোন পাওয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বা শর্তাবলি
যেকোন ব্যাংক থেকে লোন নিতে যেমন ডকুমেন্টস লাগে তেমনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ বা লোন নেওয়ার জন্য আপনার যা যা প্রয়োজন বা যে শর্তগুলো মানতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো-
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২/৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদনকারীর NID card এর ফটোকপি।
- আবেদনকারীর নিজস্ব ঘরবাড়ি থাকতে হবে।
- লোন এর ৫% সার্ভিসচার্জ হিসেবে প্রধান করতে হবে।
- প্রথম অবস্থায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার লোন পেতে পারেন।
- শিক্ষালোন ব্যতীত অন্যান্য লোনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে বিবাহিত হতে হবে।
- আবেদনকারীর চারিত্রিক সনদ পত্র ( সত্যায়িত করা)।
- নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অথবা পাসপোর্ট প্রয়োজন।
- নমিনির সদ্য তোলা ২ কপি ছবি
উপরের উল্লেখিত ডকুমেন্টস গুলো আপনার ঋন গ্রহনের জন্য প্রয়োজন হতে পারে। লোন বা ঋন এর ব্যবধানে এ শর্তগুলো বিভন্ন হতে পারে।
গ্রামীণ ব্যাংক লোন পদ্ধতি
Grameen Bank থেকে লোন বা ঋণ নেওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে আপনার নিকটতম গ্রামীনব্যাংক এর শাখায় উপস্থিত হয়ে তাদের সদস্য হন। গ্রামীণব্যাংক এর কর্মি থেকে লোন এর ফরম নিন। এবার তা সটিক তথ্য দিয়ে পূরন করুন। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস গুলো যোগকরে পুনরায় ফরমটি ব্যাংকে জমা করুন।
আপনার সব তথ্য সটিক হলে এবং সটিক ভাবে আবেদন ফরমটি পূরন করলে আশা করা যায় ১ থেকে ৪ দিনের মধ্যে আপনার লোন আবেদনটি গ্রহন হয়ে যাবে। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আপনি বিভিন্ন খাতে লোন নিতে পারবেন লোন নেওয়া আগে সেইসব খাতগুলোর সম্পর্কে জেনে নিবেন। লোন নেওয়ার জন্য খাত অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের আলাদা আলাদা রিকোয়ারমেন্ট আছে। সটিক ভাবে রিকোয়ারমেন্ট পূরন করে লোনের জন্য আবেদন করা ভালো।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোনের জন্য আবেদন করার পর আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাই করার পর সব কিছু টিকটাক থাকলে আপনাকে লোনের টাকা সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দিবে। আবেদন এর প্রক্রিয়া গুলো সহজ ভাবে বুঝার জন্য নিচে কয়েকটি ধাপে সহজ ভাবে বর্ণনা করা হলো।
ধাপ ১: গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে সম্পর্কে তৈরি করুন। আপনার নিকটতম গ্রামীনব্যাংক এ যান। আপনি পুরাতন বা নতুন গ্রাহক হতে পারেন।
ধাপ ২: লোনের জন্য আবেদন করতে সম্পত্তি এবং আয় এর সটিক প্রমানপত্র প্রয়োজন হবে। আপনাকে নিচের লিখত ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করতে হবে।
- গ্রামীনব্যাংক থেকে পাওয়া আবেদন ফরমটি সঠিক ভাবে পূরন করুন।
- আপনার ভোটার আইডি কাড আপনার কি না প্রমান করতে হবে।
- আপনার বর্তমান বা স্থায়ী ঠিকানা গুলো লিখতে হবে।
- আপনায় আয় সহিত ডকুমেন্টস যেমন বেতন স্লিপ, আয়কর সনদ ইত্যাদি দেখাতে হতে পারে।
ধাপ ৩: এবার আপনি গ্রামীনব্যাংক থেকে কি পরিমান লোন বা টাকা নিবে এবং সেটা কতো দিন রাখতে চান সেট নির্ধারণ করুন।
ধাপ ৪: এবার আপনি আপনার সম্পত্তির ডকুমেন্টস এবং আপনার আয় এর ডকুমেন্টস গুলো যোগকরে গ্রামীন ব্যাংক এর শাখায় আপনার ঋন এর আবেদন জমা করুন।
ধাপ ৫: আপনার আবেদন জমা করার পর তা গ্রহণযোগ্য হলে আপনাকে লোনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে।
এইভাবে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোনের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। এটি আপনার আর্থিক স্থিতি এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের লোনের জন্য একটি সুযোগ সুবিধা হতে পারে। তবে, আপনার ঋণের জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত করতে আপনার আয়, সম্পত্তি এবং অন্যান্য আবশ্যক তথ্যের প্রমাণ করতে হবে।
গ্রামীণব্যাংক থেকে কিস্তি নিতে কি কি প্রয়োজন
গ্রামীনব্যাংক থেকে কিস্তি নিতে সাধারণ ভাবে কিছু জিনিস প্রয়োজন হয়ে থাকে তা নিচে দেওয়া হলো :
১. আপনাকে গ্রামীণব্যাংক এর সদস্য হতে হবে।
২. আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপনার আর্থিক অবস্থান ও ঋন এর প্রয়োজনীয়তা দেখাতে হবে।
৩.আপনাকে ঋন নেওয়ার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করতে হবে। আপনি কি কারনে লোন নিবেন আপনার উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হবে।
গ্রামীন ব্যাংক থেকে কিস্তি নিতে উপরের উল্লেখিত সব গুলো জিনিস আপনার প্রয়োজন হতে পারে।
গ্রামীণব্যাংক এ লোনের সুবিধা
আমরা উপরে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি এবার আমরা জানবো গ্রামীণ ব্যাংক এর লোনের সুবিধা গুলো। কেন আপনি গ্রামীনব্যাংক থেকে লোন নিবেন? গ্রামীণব্যাংক এর লোনের সুযোগ সুবিধা গুলো কি নিচের আলোচলা থেকে জেনে নেই।
- খুব সহজে দ্রুত আপনি লোন নিতে পারবেন।
- লোনের প্রকারভেদ অনুযায়ী মুনাফার হার কম বেশি হয়।
- নিদিষ্ট এমাউন্ট এ প্রতিমাসে কিস্তিতে লোনের টাকা পরিশোধের সুযোগ।
- আপনি শিক্ষাথী অবস্থায় লোন নিতে পারবেন।
- অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় সুধের হার কম।
- প্রাথমিক অবস্থা ৫০,০০০পর্যন্ত লোন গ্রহন করতে পারবেন।
- কৃষি লোন ও ক্ষুদ্র লোন এর ক্ষেত্রে প্রতিসাপ্তায়ে নিদিষ্ট এমাউন্ট এ লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।
- এছাড়া ও অল্প কিছু দরকারি কাগজ পত্র জমা দিয়ে সহজে লোন নিতে পারবেন।
উপরে আমরা গ্রামীণব্যাংকের সুবিধা গুলো সম্পর্কে জানলাম। আশা করি বিস্তারিত আলোচনা থেকে আপনি গ্রামীনব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত একটি তথ্য পেয়েছেন। এবং গ্রামীনব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার তথ্য গুলো পেয়েছেন এবার ব্যাংক থেকে লোন নিতে আপনার আর ছোটাছুটি লাগবে না।
গ্রামীণ ব্যাংক এর উদ্দেশ্য
গ্রামীণব্যাংক এর উদ্দেশ্য হল বিশাল জনগোষ্ঠীকে কর্ম সংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের বিনা জামানতে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে।তাদের উদ্দেশ্য সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা গরীব ও দুঃস্থদের মধ্য সম্প্রসারিত করা।
২. অব্যবহৃত মানব সম্পদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৩. গ্রাম্য মহাজনের শোষণ রোধ করা।
৪. চিরাচরিত স্বল্প আয় ও স্বল্প সঞ্চয়,স্বল্প বিনিয়োগ ও স্বল্প আয় এ দুষ্টচক্রকে ঘুরিয়ে স্বল্প আয় ঋণ ও বিনিয়োগ, বেশি আয় বেশি বিনিয়োগ এ রুপান্তর করা।
উপরের গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি এই আলোচনা থেকে আপনারা গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ।
আর পড়ুনঃ কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন ২০২৪ | কিভাবে পাবেন, কারা পাবেন, লোন পাওয়ার পদ্ধতি
শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনারা গ্রামীনব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। বর্তমান সময়ে আপনি খুব সহজে গ্রামীনব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করতে পারবেন। এবং লোন নিতে আপনার তেমন ঝামেলা পোহাতে হবে না। আপনাদের যদি গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।